ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪
সাজেক ভ্যালি

মেঘের দেশ সাজেক ভ্যালি

20Fours Desk | আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১০:১৬
মেঘের দেশ সাজেক ভ্যালি
ইন্টারনেট হতে সংগ্রহ

মাথার উপরে চারিদিকে সাদা মেঘ তুলোর মত ভেসে বেড়াচ্ছে আর নিচে সবুজের সমারোহ। দেখেই মনে হবে এ যেন এক মেঘের দেশ, এক স্বপ্নপুরী। এরকম দৃশ্য দেখতে আর আপনাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে না। আমাদের দেশেই রয়েছে এমন একটি মেঘের দেশ।যার নার সাজেক ভ্যালি। রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম একটি স্থান। অপরূপ সুন্দর সাজেক ভ্যালি দেখে আপনার মনে হবে এ যেন কোনো শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা একটি অপূর্ব সুন্দর ছবি।
সাজেক বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। সাজেক থেকে ভারতের মিজোরামের দুরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে। রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়েও সাজেক আসা যায় তবে এ পথ অনেক বেশি লম্বা।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ২৬১ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগে সময় লাগে ৮ ঘণ্টার মত। রাতে রওনা দিলে সকাল বেলা খাগড়াছড়ি পৌছে যাবেন। এরপর চান্দের গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে হবে। সাজেক পৌছার পর প্রথমে ঘুরে আসতে পারেন দীঘিনালা থেকে। দীঘিনালায় আছে অপূর্ব সুন্দর হাজাছড়া ঝর্ণা। যেহেতু সাজেকে পানির অনেক স্বল্পতা তাই গোসলটা এখানেই সেরে নেওয়া ভালো। সাজেকে পানি ব্যবহারে প্রতি মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ এখানে পানির বেশ স্বল্পতা রয়েছে।অবশ্য গোসল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য দরকারি পানি প্রতিদিন ট্রাকে করে পৌঁছে যায় সাজেকে। দীঘিনালায় একটি সেনানিবাস আছে। তাই এখানে যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টা থেকে ১১টার মধ্যে।তাই ঐ সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায়। এসকোর্ট মিস করলে আবার এসকোর্টে পেতে অপেক্ষা করতে হবে বিকেলের জন্য। দীঘিনালা থেকে  বাগাইহাট, মাচালং হাট হয়ে সাজেক। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে প্রায় আড়াই ঘন্টার মত লাগে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, চারদিকে শুধু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ সাজেকের মূল আকর্ষণ। যা নিমিষেই ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি।

সাজেকে পৌছেই ঠিক করে নিতে হবে রাতে থাকার কটেজ। বিভিন্ন মানের ও দামের কটেজ রয়েছে সাজেকে। ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া এই কটেজগুলোর এক রাতের জন্য। সাজেকে বাঙ্গালি ও আদিবাসী দুই রকমের হোটেলে খাবার ব্যবস্থা আছে। তবে যেখানেই খান না কেন খাবারের জন্য অবশ্যই আগে থেকে অর্ডার করতে হবে। তাই জীপের ড্রাইভারের সাহায্যে কোন হোটেলে খাবারের অর্ডার দিতে পারেন। আদিবাসী হোটেল গুলোতে বিভিন্ন রকমের আদিবাসিদের খাবার পাওয়া যায়। ইচ্ছা করলে এখান থেকে নিতে পারেন ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদ। হালাল খাবার খেতে চাইলে খাগড়াছড়ি থেকে হালালভাবে মুরগি জবাই করে নিয়ে যেতে হবে। অবশ্য বাঙালি হোটেলে এসব চিন্তা করতে হবে না। মুরগি ছাড়া ডিম, ডাল, ভর্তা, সবজি সহ অন্যান্য খাবারও পাওয়া যায় সাজেকে।

সাজেক পৌঁছে খাওয়া দাওয়ার পর দুপুরের কাঠফাটা রোদে না ঘোরাঘুরি করে একটু বিশ্রাম নেওয়াই ভালো। এতে দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি কেতে যাবে। বিকেলে জীপেই যেতে পারেন সাজেক ভ্যালির একদম ভেতরে।সেখানে থাকা উঁচু টিলায় উঠে উপভোগ করতে পারেন সূর্যাস্ত। সাজেকের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে। মেঘমুক্ত নীলাকাশে সূর্যটি একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে আর আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে এবং মিটমিট করে জ্বলে উঠছে একটি দুটি করে তারা। অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে একটি দুটি তারা থেকে সহস্র তারা  চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠবে। এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। যারা কখনো মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ দেখেননি তারাও সাজেকে এসে জীবনে প্রথমবারের মত দেখতে পারেন আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গার। রাতে সবাই মিলে করতে পারেন বারবিকিউ পার্টি কিংবা জমিয়ে দিতে পারেন জমপেশ আড্ডা। তবে এক্ষেত্রে মশার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ভোরে সূর্যোদয় দেখতে হলে অবশ্যই খুব ভোরে চলে আসতে হবে এক বা দুই নম্বর হ্যালিপ্যাডে। সাজেকে সূর্যোদয়ের সময় সোনালি রঙের আভা যখন সাদা মেঘের উপর ছড়িয়ে পড়ে তখন আসাধারণ এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সাধারণত সাজেকে সবাই একদিনের থাকার প্ল্যান নিয়েই যায়। ফেরার সময়ও সেনাবাহিনীর এসকোর্ট ধরে ফিরতে হবে। সাজেকে থেকে এসকোর্ট শুরু হয় এগারটায় এবং খাগড়াছড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যাবে।

সতর্কতাঃ

সাজেকে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সবকিছু চলে সোলারে পাওয়ারে। তাই আগে থেকেই মোবাইল ফুলচার্জ দিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাল। সাথে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকলে অনেক ভালো। সাজেকে রবি ও টেলিটক ছাড়া অন্য অপারেটরর নেটওয়ার্ক নেই। তাই সাথে নিতে হবে এই দুই অপারেটরের যেকোন একটি সিম। পানি ব্যবহারে সাজেকে আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে।মশার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

 

উপরে