ঘুরে আসুন হাকালুকি হাওর
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা পাহাড়বেষ্টিত নিচু সমতল ভূমি। এর উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালা, পূর্বে মণিপুরের উঁচু ভূমি এবং দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্যের পর্বতশ্রেণি। প্রতিবছর এ নিচু অঞ্চল বর্ষার জলে প্লাবিত হয়ে ধু ধু সাগরে পরিণত হয়। আর এরই অবিচ্ছেদ্যাংশ হলো হাকালুকি হাওর। "সাগর" শব্দটি থেকে "হাওর" শব্দের উৎপত্তি বলে ধরে নেয়া হয়। তবে "হাকালুকি" নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন লোককাহিনী রয়েছে।
হাকালুকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর। আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। এর মধ্যে ২৩৮টি বিল রয়েছে যার আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এসব বিলে সারাবছরই কমবেশি জল থাকে। জুরী ও পানাই নদী এ হাওরের জলপ্রবাহ ঠিক রাখায় জলজ জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধারে পরিণত হয়েছে হাকালুকি।
বর্ষাকালে জলপ্রবাহ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ থেকে ৬ মিটার। তখন দেখা যায় হাওরের অন্যরূপ। থৈ থৈ জলে হিজল করচ মাথা উঁচু করে ভাসতে থাকে। হাওর পরিণত হয় জলাভূমির বনে। শীতকালে জল শুকিয়ে গেলে পাল্টে যায় চিত্র। উজান থেকে বয়ে আসা পলিতে হাওরের মাটি উর্বর হয়ে ওঠে। যার ফলে জন্মে প্রচুর জলজ উদ্ভিদ। এর মধ্যে রয়েছে শাপলা, পদ্ম, চাঁদমালা, সিঙ্গারা ইত্যাদি। এসব উদ্ভিদের অনবদ্য সৌন্দর্যে মোহিনীয় হয়ে ওঠে হাওর প্রতিবেশব্যবস্থা। রঙ-বেরঙের ফুলে সৌন্দর্য ছড়ায়। এসব উদ্ভিদ পচে মাটির উর্বরতা আরও বৃদ্ধি করে। এছাড়া হিজল, করচ, বরুণ প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায় হাওরে। হাওরে প্রচুর ধান হয়। ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় উড়ে বেড়ায় বর্ণিল নানা ধরনের কীটপতঙ্গ। শীতকালে দেখা যায় পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। পাতিকুট, ভূতিহাঁস, লেঞ্জাহাঁস, চকাচকি এর মধ্যে অন্যতম। সাপ, কচ্ছপও দেখা যায় এখানে।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা হতে বড়লেখা বাস ভাড়া (৩০০-৫০০) টাকা, বড়লেখা থেকে লোকাল সিএনজি করে কানোনগো বাজার জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা, কানোনগো বাজার থেকে লোকাল সি,এন,জি করে কুটাউরা বাজার জনপ্রতি ভাড়া ১৫ টাকা, কুটাউরা বাজার থেকে পাখি দর্শন টাওয়ার সি.এন.জি রিজার্ভ ৫০-৮০ টাকা,অথবা পায়ে হেটে যেতে পারেন রাস্তার শেষ সিমান্তে পাখি দর্শন টাওয়ার। বিকেল বেলা আসার পথে হাল্লা গ্রামের মরহুম মনোহর মাষ্টারের বাড়ি (পাখি বাড়ি) ঘুরে দেখতে পারেন অজশ্র পাখীর অভয়াশ্রম... যেখান থেকে উপভোগ করতে পারেন হাকালুকির সৌন্দর্য।