ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি ভ্রমন

খাগড়াছড়ি ভ্রমন

পার্বত্য চট্রগ্রাম বিভাগের অন্যতম সুন্দর একটি পার্বত্য জেলা এই খাগড়াছড়ি। ৮টি উপজেলা ও ৯টি থানা নিয়ে গঠিত এই জেলা। চেঙ্গী, মাইনি, কাসালং নদিসমুহ এই জেলাতেই আছে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খাগড়াছড়ির দুরত্ব প্রায় ২৬৫ কিলোমিটার। সারিসারি পাহাড় আর মেঘের দেশ ও বলা যায় এই পার্বত্য জেলাকে। এই জেলাতে সমতল ভুমি নাই বললেই চলে। পুরো জেলাটি যেন বেচে আছে পাহাড়ের বুকে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে সৃষ্টি আকাবাকা পাহাড়ি পথ এই জেলাকে দিয়েছে এক ভিন্যরকম রুপ সৌন্দর্য।

কখন যাবেন

এক এক সিজনে পাহাড়ি এলাকার রুপ এক এক রকম ধারন করে থাকে। ঝর্নার ছলছল পানিতে গা ভেজাতে চাইলে, সাথে চোখ ধাধানো সবুজের সমারোহ দেখতে চাইলে বর্সায় যেতে হবে। আর যদি কাছে থেকে মেঘেদের খেলা দেখতে চান অথবা নিজেকে মেঘের মাঝে খুজে নিতে ভালোবাসেন, তাহলে শিতকালে চলে যান। বলতে গেলে সারা বছরই ভ্রমন উপযুক্ত।
কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮/১০ টি পরিবহন এর এসি/নন এসি বাস সরাসরি খাগড়াছড়ি যায়। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরেরপুল, আরামবাগ, সায়েদাবাদ থেকে বাস ছাড়ে। নন এসি বাসের ভাড়া ৫২০ টাকা জনপ্রতি ও এসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা জনপ্রতি।

এছাড়াও ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের বাসে অথবা ট্রেনে চট্রগ্রাম গিয়েও খাগড়াছড়ি যাওয়া যায় বাসে। চট্রগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ির বাস ভাড়া ২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়ি শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল, মোটেল রয়েছে। শহরের শাপলা চত্বরের আশেপাশেই পেয়ে যাবেন বহু হোটেল। নিজে দেখে শুনে হোটেল নেওয়াই ভালো, আগে থেকে বুকিং না দিয়ে। তবে যদি সিজনে (যেমনঃ ঈদ,পুজা বা বিশেষ কোন বন্ধের দিন)যান তাহলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখাই ভালো। হোটেল রেঞ্জ ৪০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত আছে। পর্যটন মোটেল এবং গিরি থেবারে হোটেল ভাড়া একটু বেশি। আর কম খরচে থাকতে চাইলে শাপলা চত্বরের আশেপাশে কোন হোটেলে উঠাই ভালো হবে।

এছাড়াও আপনি চাইলে দিঘিনালাতে রাত্রি যাপন করতে পারেন। দিঘিনালা বাজারেই রয়েছে হোটেল/ বোর্ডিং।

কিছু হোটেল/মোটেলের ফোন নাম্বারঃ

পর্যটন মোটেলঃ ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫ গিরি থেবারঃ ০১৮৫৯০২৫৬৯৮ হোটেল শৈল সুবর্নঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬ হোটেল লবিয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০ হোটেল জেরিনঃ ০৩৭১-৬১০৭১ হোটেল শিল্পিঃ ০৩৭১-৬১৭৯৫ দিঘিনালা গেস্ট হাউজঃ ০১৮২৭৪৬৮৩৭৭ শাহজাহান হোটেল দিঘিনালাঃ ০১৮২৫৯৮০৮৬৭
কোথায় খাবেনঃ

শহরের শাপলা চত্বর মোরে রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট, এছাড়াও বাস স্ট্যান্ড এ ও পাবেন খাবারের জন্য বেশ ভালো মানের কিছু রেস্টুরেন্ট। তাছাড়া সিস্টেম রেস্তোরা পানথাই পাড়ায় অবস্থিত পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহি খাবারের জন্য বিখ্যাত। চাইলে আগে থাকতে ফোনে খাবারের অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন এই রেস্তরাতে। ফোনঃ ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩,০১৭৩২৯০৬৩২২

যদি দিঘিনালা রাত্রি যাপন করেন দিঘিনালা বাজারের খাবারের রেস্টুরেন্ট এ খেতে পারবেন।

দর্শনীয় স্থান


রিসাং ঝর্নাঃ খাগড়াছড়ি সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রিসাং ঝর্না। প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে শো শো শব্দে নিচের পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়া ঝর্নার আওয়াজ শুনতে হলে প্রথমে বাসে করে তেরাংতৈ কালাই ঝর্না গেইটে নেমে যান। ভাড়া ২০ টাকার মত নিবে। তারপর প্রায় ২ কিলো হেটে কিছুটা নিচে নেমে এসে এবার শ খানেকের উপড় সিড়ি পাড়ি দিয়ে ঝর্নার নিচে পৌছাবেন। রিজার্ভ গাড়ি বা নিজস্ব গাড়ি থাকলে ঝর্নার কাছ পর্যন্ত গাড়িতেই আসতে পারবেন। তবে পাহাড়ি পথে সবুজের সাথে এই দুই কিলো হাটার পথ আপনার মনে প্রশান্তি যোগাবে নিশ্চিত। চাইলে পাহাড়ের গা বেয়ে ১০০ ফুট উপড়ে উঠে ঝর্নার উৎপত্তিস্থল ঘুরে আসতে পারেন। তবে সাবধান যেখান হতে ঝর্নার পানি সরাসরি নিচে আছড়ে পড়ছে তার থেকে নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে রুপ সুধা পান করুন। নয়ত অতি পিচ্ছিলের দরুন যে কোন দুর্ঘটনার স্বিকার হতে পারেন। উপড় থেকে ঝর্নার পানি নিচে পড়েই আবার পাথুরের গা বেয়ে প্রায় একশ ফুট দির্ঘ পথ ধরে সমতলে নেমে গেছে এই শিতল জলরাশি। ঝর্নার পানি যেখানে পড়ছে সেখানে গিয়ে গা ভেজাতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারন অতিরিক্ত পিচ্ছিল পাথর।

অপু ঝর্নাঃ রিসাং ঝর্নার পাশেই অবস্থিত এই ঝর্নাটিকে অনেকে রিসাং ২ বলেও ডেকে থাকে। রিসাং থেকে প্রায় ২০/২৫ মিনিট হাটার পথের দুরত্বে গেলেই মিলবে এমন সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর এই ঝর্নাটি। পাথুরে গা বেয়ে ঝর্নার পানি নিচে বেয়ে পড়ছে অনবরত। রিসাং এর পাশাপাশি এই ঝর্নাটি না দেখে আসা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

চক্রমুনি/অপরাজিতা (হাজারি) বৌদ্ধ বিহারঃ খাগড়াছড়ি জিরো মাইল এলাকায় অবস্থিত এই বৌদ্ধ বিহার। এখানে রয়েছে ৩৭ ফুট লম্বা বিশাল এক বৌদ্ধ মুর্তি। যার দেহে রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য মুর্তি। মনোরম এই মুর্তি দেখতে হলে শহর থেকে বাসে করে আসতে পারেন। মেইন রোডের পাশেই অবস্থিত এই বৌদ্ধ বিহার টি। প্রবেশের জন্য কোন টিকেটের প্রয়োজন নাই।

জেলা পরিষদ পার্কঃ এই পার্ক টি জেলা সদরের জিরো মাইল এলাকায় অবস্থিত। ভিতরে রয়েছে মনোরম পরিবেশ সাজানো গুছানো বাগান ও ঝুলন্ত ব্রিজ।প্যাডেলিং এর জন্য রয়েছে বোট। ঘন্টায় ২০০ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ি বাকে বোট চালাতে পারেন। বাচ্চাদের খেলার জন্য আছে কিডস জোন। ঝুলন্ত ব্রিজ দুই পাহাড়ের সংযোজন এর জন্য করা হয়েছে যা এই পার্কের সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।খাবারের জন্য রয়েছে ভিতরে দুইটি দোকান। পার্কের বাইরে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে। চাইলে সদর থেকে বাসে জিরো মাইল নেমে হেটে যেতে পারেন দু মিনিট লাগবে। পার্কে প্রবেশ টিকেট ২০ টাকা জনপ্রতি। চাইলে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন গেস্ট হাউজে।

নিউজল্যান্ড পাড়াঃ খাগড়াছড়ি শহরের খুব কাছে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দক্ষিনে পানথাই পাড়ার পাশে অবস্থিত সবুজের এই পাড়া। সিএনজি বা ইজি বাইক যোগে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন কোন এক বিকেলে নিউজল্যান্ড পাড়া থেকে। সড়কের দুই পাশে সবুজ ক্ষেত খামার পিছনে পাহাড়ের মিতালি এক অন্যরকম সৌন্দর্য উপহার দিয়েছে প্রকৃতি খাগড়াছড়ির এই সমতল ভুমিকে। সবুজ মিতালির দেশ নিউজল্যান্ড এর সাথে মিল থাকায় স্থানিয় লোকজন একে নিউজল্যান্ড পাড়া নামে ডেকে থাকে।

য়ংড বৌদ্ধ বিহারঃ শাপলা চত্বরের পাশেই এই বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। সিএনজি/ইজি বাইক যোগে অথবা পায়ে হেটেও যাওয়া যায় এই বৌদ্ধ বিহারে। এখানে রয়েছে বেশ বড় দুটি বৌদ্ধ মুর্তি। সাথে রয়েছে একটি পুকুর। প্রবেশ মুখে দুই পাশে রয়েছে বাহারি ফুলের বাগান।

অরন্য কুটির মন্দিরঃ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে অবস্থিত এই শান্তির কুটির টি। সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরত্ব। প্রবেশ মুখেই দেখবেন বিশাল বড় গেইট। ভিতরে ঢুকলে পাবেন সুন্দর সাজানো গুছানো এক পথ যা সোজা এক টিলার উপড় উঠে গেছে। আর সেখানে রয়েছে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট গৌতম বুদ্ধের মুর্তি। এছাড়াও পাবেন বেশ কিছু মুর্তি গৌতম বুদ্ধের সহচারিদের। যেতে পথে রাস্তার পাশের চেঙ্গি নদি আপনার নজর কাটবে।

দিঘিনালা ঝুলন্ত ব্রীজঃ খাগড়াছড়ি সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে দিঘিনালাতে মাইনি নদির উপর অবস্থিত এই ঝুলন্ত ব্রিজ যা দুই পাশের গ্রামের যোগাযোগ এর জন্য নির্মান করা হয় ১৯৯০ সালে। লোকাল বাস আছে সদর থেকে দিঘিনালা যাবার অথবা নিজস্ব গাড়ি বা লোকাল চান্দের গাড়ি করেও আসতে পারেন। দিঘিনালার সেনা ক্যাম্প পার হয়ে কাওয়া খালি বাজার থেকে ডান দিকে ১৫/২০ মিনিট হাটার পথের দুরত্ব এই ঝুলন্ত ব্রিজ টি।

উপরে