ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪
শিশুর দাঁত

শিশুর দাঁত এর যত্ন নেবেন কিভাবে?

20fours Desk | আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১৪:৫২
শিশুর দাঁত এর যত্ন নেবেন কিভাবে?

শিশুদের প্রথম দাঁত উঠার সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় পর্যাপ্ত যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করাই পারে শিশুকে ভবিষ্যতে সুন্দর ও রোগ মুক্ত দাঁতের নিশ্চয়তা দিতে। অনেকেই ভাবতে পারেন প্রথম যে দাঁত উঠে সেগুলো তো কিছুদিন পরে পড়ে যায়, তাহলে এতো যত্ন নেয়ার প্রয়োজন কি? এটা খুবই ভুল ধারণা। মনে রাখবেন, প্রতিটি দাঁতই মূল্যবান। এসময় দাঁতের যত্নে অবহেলা করলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

শিশুদের দাঁত উঠার প্রাথমিক সময়সীমা হচ্ছে ৬-১২ মাস বা শিশুর জন্মের ১ বছর বয়সের মাঝে। তবে সাধারণ ভাবে গড়ে ৬ মাস বয়সের মাঝেই অধিকাংশ শিশুর দাঁত উঠে যায়। তাই এসময় মায়েরা যে খাবারের সাথে যে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান ( ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস) গ্রহণ করেন, তা তার গর্ভস্থ শিশুর ভবিষ্যৎ দাঁত গঠনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শিশুর দাঁতের যত্নে যা করতে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো:

হাতের আঙ্গুল বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শিশুর মুখ ও মাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।দাঁত না থাকলেও নবজাতক শিশুর মুখ ও মাড়ি পরিষ্কার রাখা উচিত। নতুন দাঁত উঠার আগে মাড়ির সেই জায়গাতে ছোট গর্ত তৈরি হতে পারে। এখানে ব্যাক্টেরিয়া লুকিয়ে থাকতে পারে ও রোগ সংক্রমণ করতে পারে। এটা প্রতিদিন সকালে খাবারের আগে ও রাতে ঘুমাতে যাবার আগে করুন, যাতে আপনার শিশু দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাসটিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর শেষে পাতলা সুতি কাপড় অথবা তুলা দিয়ে মাড়ির ওপর থেকে দুধের আবরণ পরিষ্কার করে দিন আর খেয়াল রাখবেন তা যেন অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হয়। দাঁত উঠার আগে শিশু যা কিছু সামনে পায় সেটাই কামড়াতে চায়, তখন তাকে বেবি টিথার দিতে পারেন যা কামড়ানোর ফলে তার দাঁতের গঠন শক্ত হবে। এই সময় শিশুর হাতের কাছ থেকে বিষাক্ত, ধারালো, নোংরা জিনিস বা ওষুধপত্র দূরে রাখুন আর এমন কিছু দেবেন না যা গিলে ফেললে তার গলায় আটকে যেতে পারে।

আপনার শিশুর প্রথম জন্মদিনের মাঝেই তার মুখে বেশ কয়েকটি দাঁত উঠে যাবার কথা। সাধারণ ভাবে অন্তত ৮ টি দাঁত। যদি ১৮ মাস বয়সেও আপনার শিশুর দাঁত না উঠে, তবে চিন্তিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা শিশুদের মাঢ়িতে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘষা বা rub করতে বলেন, যাতে দাঁত উঠার ব্যপারটা সহজ হয়।

শিশুর দুধ দাঁত গুলোর যত্নে আপনার আরো বেশি খেয়াল রাখা দরকার কারণ দুধদাঁত গুলো সাধারনত সাত থেকে এগারো বছর বয়স পর্যন্ত ধীরে ধীরে পড়ে গিয়ে আবার নতুন করে স্থায়ী ভাবে জন্মায়। শিশুদের পরবর্তী স্থায়ী দাঁতগুলোতে যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য তার দুধদাঁত গুলোর যত্ন নেয়া অনেক গুরুত্বপুর্ন। অযত্ন ও অবহেলার কারনে দুধ দাঁতের শিকড়ে প্রদাহ অনেক দিন স্থায়ী থাকলে স্থায়ী দাঁতের ক্ষতি হয়। এমন অনেক কারনেই স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা বা অসমানভাবে বেড়ে উঠে। এই জন্য দুধদাঁত পড়া ও স্থায়ী দাঁত ওঠার সময়ে শিশুর দাঁতের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

শিশুর যে কয়টি দাঁত উঠুক না কেন, সেগুলোর অবস্থান কিভাবে রয়েছে তা লক্ষ্য করুন। অর্থাৎ শিশুর দাঁত ফাঁকা ফাঁকা বা ঘন সন্নিবেশিত কিনা।

নতুন দাঁত উঠলে শিশুরা দাঁতে দাঁতে ঘষা লাগিয়ে আনন্দ পায়, কারণ এরকম করলে মুখের মাঝে শব্দ সৃষ্টি হয়। ব্যপারটা তাদের কাছে অনেকটা খেলার মতো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটা শিশুর দেহে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির নির্দেশক ও বটে। হতে পারে সে ক্লান্ত, কিংবা ঠান্ডা বা গরম অনুভব করছে অথবা সর্দি লেগেছে। এগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখুন।

দাঁত উঠলে শিশুকে শুরুতেই দাঁত ব্রাশ করা শেখাতে হবে। শিশুকাল থেকেই দাঁত ব্রাশের অভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুর বাবা মা তার সামনে ব্রাশ করলে তার আগ্রহ অনেক বাড়ে আর অনুকরণ প্রিয় হওয়ার কারনে তারা খুব জলদি শেখে। তাই দাঁত ওঠার শুরুতেই আপনার শিশুর হাতে কোমল ও নরম একটা ব্রাশ তুলে দিন। অবশ্যই তার জন্য বেবি জেল বা পেষ্ট ব্যবহার করবেন কারন তা গিলে ফেললেও সমস্যা নেই আর বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করা শেখান।

আরও কিছু টিপস্:

শিশুরা মিষ্টি জাতীয় খাবারের ভক্ত। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারই দাঁতের সমস্যার মূল কারণ। মিষ্টি খেলে মুখে ব্যাকটেরিয়া হয় বেশি। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে যায়। এ খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া দাঁতের চারপাশে প্লাক তৈরি করে। প্লাকের ব্যাকটেরিয়া মিষ্টি জাতীয় খাবারকে এসিডে পরিণত করে। যে কারণে দেখা দেয় দাঁতের ক্ষয়। এজন্য শিশুদের মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খেতে দেয়া যাবে না। চকলেট অথবা চিনিজাতীয় খাবার খেয়ে মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা শিখান আপনার শিশুকে। এত কিছুর পরে দুধ দাঁতের কোনো সমস্যা হলে অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

বছরে অন্তত দু’বার ডাক্তার দেখানো উচিত। শিশুর দুধ দাঁত নড়ে গেলে তা টেনে তোলা উচিত নয়, হালকা নড়লে যদি উঠে ভালো, নয়তো নিকটস্থ ডেন্টিস্টের কছে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ

উপরে