ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
শিশু বিকাশ

শিশুর ঘুম

শিশুর ঘুম

পরিবেশ, অভ্যাসের ওপর এবং বয়সভেদে শিশুর ঘুমের পরিমাণ নির্ভর করে। শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পরিমিত ঘুমের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। সব শিশুর শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধির হার এক নয় তাই ঘুমও একেকজনের একেক রকম।

নবজাতক শিশু জন্মের প্রথম কয়েক দিন ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটায়। খিদা পেলে, প্রস্রাব-পায়খানা করে বিছানা ভেজালে বা অন্য কোনো অসুবিধা হলেই শিশু জেগে যায়। কোনো কোনো শিশুর ঘুম কম। এমনিতেই সে জেগে থাকতে পারে।

এক মাস পর শিশুর ঘুম কিছুটা কমে আসে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা, জন্মের প্রথম দুই মাসে দিন রাতের পার্থক্য বুঝতে পারে না। হয়তো দিনে একটানা ঘুমায় রাতে জেগে থাকে। দুই মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত শিশু ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা, দুই থেকে ছয় বছর পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমায়। সাধারণত ছয় থেকে সাত বছরের শিশু আট থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমায়।
শিশুর পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। জন্মের পর কয়েক দিন পর্যন্ত শিশু মায়ের কোলকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করে বলে মায়ের কোলেই ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিছু দিন পর শিশু মায়ের পাশে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে শুয়ে থাকে, কম কাঁদে, ভালোভাবে ঘুমায়।

শিশুর ঘুমানোর পরিবেশ হবে যেখানে শব্দ কম, আলো বাতাস পূর্ণ নরম বিছানা, পরিচ্ছন্ন, কাঁথা-বালিশ দিয়ে জড়ানো পরিবেশ। জন্মের কয়েক মাস শিশুকে মায়ের পাশে ঘুমাতে দিলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি যথাযথ হয়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সে শিশুকে একই ঘরে আলাদা বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা করলে শিশু স্বাবলম্বী হয়। ছয় থেকে সাত বছরে আলাদা রুমে ঘুমালে শিশুর আত্মনির্ভরশীলতা বাড়বে।

শিশু একটু বড় হলে ঘুম নিয়ে অনেক সময় জ্বালাতন করে। উপযুক্ত পরিবেশ যেমন নরম বিছানা, পাশবালিশ, শব্দহীন, আলো বাতাস পূর্ণ ঘর, নরম সুতি আরামদায়ক ঢিলে জামা, ঘুমানোর সময় মাথায় পিঠে হাত বুলানো, ছড়া বা গল্প বলা ইত্যাদি শিশুর ঘুমকে ত্বরান্বিত করবে। না ঘুমালে জোর করা যাবে না। তাতে শিশু জেদি হতে পারে।
বিভিন্ন কারণে শিশু কম ঘুমাতে পারে। যেমন পেট না ভরা থাকলে, পেটে ব্যথা হলে, আবেগজনিত কোনো সমস্যা, খুব বেশি শব্দ, গরম বা ঠাণ্ডা যেকোনো শারীরিক অসুস্থতায়, মায়ের অনুপস্থিতি ইত্যাদি।
শিশুর ঘুমের সমস্যা হলে মেজাজ খিটখিটে হয়, খাবারে অরুচি, খেলাধুলায় অনাগ্রহ, অযথা ঝামেলা করে পরিবারের সবাইকে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে।

তিন মাস বয়সী শিশুদের পেটে ব্যথায় সন্ধ্যা বা রাতের প্রথম দিকে বেশ কাঁদে। এমতাবস্থায় দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে কাঁধে নিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দিয়ে গ্যাস বের করতে হবে। তাতে শিশুর আরামবোধ বাড়বে। অথবা গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে। শিশুর শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কানপাকা, খোসপাঁচড়া থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।
কাজেই যেকোনো কারণেই হোক না কেন শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত হলে তার কারণ বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

উপরে