ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
মাতৃদুগ্ধ

মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে যেসব খাদ্য উপাদান

20fours Desk | আপডেট : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৩:০৫
মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে যেসব খাদ্য উপাদান

জন্মের পরে একটি শিশু প্রথম ছয়মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ পান করেই বেঁচে থাকে এবং বেড়ে ওঠে। নিঃসন্দেহে একটি শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ সবচাইতে উপকারী ও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি শিশু তার মাতৃদুগ্ধ থেকেই পেয়ে যায়। মাতৃদুগ্ধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি যা মায়ের শরীর থেকেই আসে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, মাতৃদুগ্ধের এমন ক্ষমতা রয়েছে যা শিশুর শারীরিক সমস্যা মোকাবিলা করতে আজীবনের জন্য সাহায্য করে থাকে।

তবে অনেক মায়ের একটি সাধারণ সমস্যা দেখা দেয় সন্তানকে স্তন্যপান করানোর ক্ষেত্রে। স্তন্যে দুধের পরিমাণ খুবই কম দেখা দেয়, যা শিশুর পেট ভরার জন্য যথেষ্ট হয় না। বাধ্য হয়েই মায়েদের বাইরের দুধ শিশুদের খাওয়াতে হয়। মাতৃদুগ্ধের স্বল্পতা দেখা দেবার অন্যতম কারণ হলো সঠিক খাদ্যাভাস ও সঠিক খাদ্য উপাদান খাওয়ার স্বল্পতা। এখানে খুবই পরিচিত এবং সহজলভ্য কিছু খাদ্য উপাদানের নাম তুলে ধরা হলো। এই সকল খাদ্য উপাদান মায়ের স্তন্য দুগ্ধ তৈরিতে এবং বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিকভাবে সাহায্য করে থাকে।

১/ ওটস

ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। একই সাথে ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। দুধ, ফল কিংবা স্মুথির সাথেও ওটস খাওয়া যাবে দারুণভাবে।

২/ কচুশাক

সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর জন্য মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন উপস্থিত থাকতে হবে। সন্তান জন্মদানের পরে মায়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। কচুশাক সেক্ষেত্রে খুব চমৎকার একটি উপাদান। কারণ কচুশাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।

৩/ গাজর

গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ। যা খুব দারুণভাবে মায়ের স্তন্যের দুধ উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে। স্তন্যদানকারী প্রতিটি মায়ের প্রতিদিন এক-দুই গ্লাস গাজরের রস খাওয়া উচির সকালের নাস্তা অথবা দুপুরের খাবার খাওয়ার সময়ে।

৪/ লাউ

নিশ্চয় জানতে চাইবেন এতো সকল খাদ্য উপাদান ও সবজির মাঝে কেন আলাদা করে লাউ এর কথা উল্লেখ করা হলো? কারণ লাউ এমন একটা সবজি যেটাতে রয়েছে ৯৬% পানি। স্তন্যদান করার ক্ষেত্রে পানি হলো প্রধান উপাদান। সেক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি করতে লাউ তুলনাহীন।

৫/ ফলের রস

পানি ব্যাতিত তরল জাতীয় পদার্থের জন্য ফলের রসের কোন বিকল্প নেই। ফলের মৌসুমি উপর নির্ভর করে যে কোন ধরণের ফলের রস মায়েদের জন্য খুব উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ফলে যেন পানির ভাগ বেশী মাত্রায় থাকে।

৬/ কাজুবাদাম

প্রতিদিন কাজুবাদাম খাওয়ার সবচাইতে ভালো উপায় হলো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠেই সেই বাদাম খেয়ে ফেলা। কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। যেগুলো দুগ্ধ উৎপাদনের হরমোনকে উদ্দীপ্ত করতে সাহায্য করে।

৭/ বার্লি

বেটা-গ্লুক্যান এর অন্যতম উৎস হলো বার্লি। এই বেটা-গ্লুক্যান প্রোল্যাকটিন এর উৎপাদন অনেক বাড়িয়ে। প্রোল্যাকটিন হলো মাতৃদুগ্ধের হরমোন। এছাড়াও বার্লিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে থাকে।

৮/ গরুর দুধ

গরুর দুধকে বলা হয়ে থাকে ক্যালসিয়ামের পাওয়ার হাউজ। স্তন্যদানকারী মায়েদের প্রতিদিন অন্তত দুই গ্লাস করে গরুর দুধ খাওয়া উচিৎ। এছাড়াও মজার ব্যাপার হচ্ছে, গরুর দুধ মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে।

৯/ লাল চাল

এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে লাল চাল মাতৃদুগ্ধের জন্যে উপকারী। এছাড়াও লাল চাল শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে ও মায়েদের খাবার খাওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি করে।

১০/ রসুন

এই জাদুকরী খাদ্য উপাদানটি একজন স্তন্যদানকারী মায়ের অবশ্যই খাওয়া উচিৎ। প্রতিদিনের বিভিন্ন ধরণের মশলাযুক্ত খাবার রান্নায় রসুন থাকলেও বাড়তি এক-দুইটি কোয়া খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

১১/ তুলসী পাতা

তুলসী পাতাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম। পুষ্টিহীন মায়েদের পরিচর্যার জন্য এটা খুব দারুণ একটি উপাদান। পাতার রস অথবা পাতা ভেজে খাওয়া যাবে খুব সহজেই।

১২/ খেজুর

প্রাকৃতিক মিষ্টিজাত উপাদান হিসেবে খেজুর দারুণ জনপ্রিয়। যেটা মায়েদের শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বলে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন, যা দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।

১৩/ ডিম

ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিতামিন-এ, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ যা স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। একইসাথে ডিম মাতৃদুগ্ধের উন্নতি সাধিত করে থাকে। প্রতিদিন একটি করে ডিম জাদুর মতো কাজ করে থাকে।

১৪/ সবুজ পেঁপে (কাঁচা পেঁপে)

সবুজ পেঁপেতে প্রাকৃতিকভাবেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্যালাকটাগজ (galactagogue). যেটা কিনা শুধুমাত্র সবুজ এবং কাঁচা পেঁপেতেই পাওয়া যায়। এই উপাদান স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।

১৫/ মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলুতে থাকে বেটা-ক্যারোটিন, যা স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। বেটা-ক্যারোটিন গাজরেও পাওয়া যায়, যা মায়েদের দুধ এর উৎপাদন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।

সূত্র: BoldSky

উপরে