খাবার আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন খাবার গ্রহণ করতে হয়। আর এসব খাবারে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে লেগে থাকে। আর খাবারের এসব পুষ্টি উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ। আসলে আঁশ হলো এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা মূলত শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় এবং সহজে হজম হয় না। সাধারণভাবে আঁশ জাতীয় খাবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রে হজম হয় না। এর কারণ হলো এদের হজম করার জন্য আমাদের পরিপাকতন্ত্রে কোনো পাচক রস বা এনজাইম নেই। খাবারের আঁশ জাতীয় অংশটুকু হলো হজম না হওয়া শর্করার অংশ। এগুলো আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি বা শক্তি সরবরাহ না করলেও এগুলো অনেক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। আসুন তবে আজ জেনে নিই আঁশ জাতীয় খাবার বা আঁশ আমাদের শরীরের কিভাবে উপকার করে থাকে তা সম্পর্কে।
আঁশ জাতীয় খাবারের উপকারিতাঃ
১। আঁশ জাতীয় খাবার খেলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা একদম কমে আসে। আসলে যেহেতু আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্যের আঁশ অংশটুকু হজম না হওয়ার কারণে এগুলো পাকস্থলীর বেশ কিছু জলীয় অংশ শোষণ করে ধরে রাখে এবং এই জলীয় অংশসহ এগুলো মলের সাথে বের হয়ে আসে। আর এতেই মল নরম হয় এবং সহজে বেরিয়ে আসে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়।
২। খাদ্য খাওয়ার পরে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। আর এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে থাকে ডায়াবেটিকস রোগীদের। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপকার করতে পারে আঁশ জাতীয় খাবার। কারণ আঁশ আমাদের রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আবার যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক সময় রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে আঁশ জাতীয় খাবার সেটির নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমে।
৩। ক্যান্সারের মত মরণঘাতি রোগের হাত রক্ষা করতে আঁশ জাতীয় খাবারের ভুমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যারা নিয়মিত বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন তাদের পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। এছাড়াও অ্যাপেনডিসাইটিস, ডাইভারটি কুলাইটিসের মত রোগের ঝুঁকিও অনেক কমে যায়।
৪। নিয়মিত আঁশ যুক্ত খাবার গ্রহনের ফলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। একই সাথে এই খাবার গ্রহনের ফলে আমাদের হৃদরোগ, রক্তনালীর রোগ কমে আসে। এছাড়াও আমাদের পিত্তথলির বিভিন্ন রোগ সারাতে আঁশ যুক্ত খাবারের ভুমিকা অপরিসীম। লিভারের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে আঁশ যুক্ত খাবার অনেক উপকারি।
কিছু আঁশ যুক্ত খাবারঃ
বেশ কিছু সবজি রয়েছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ আছে। যেমন- বাঁধাকপি, ফুলকপি, ফুলকপি, শিম, পটল, কচু, বেগুন, বরবটি, মটরশুঁটি, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাঁটা, সজনে ইত্যাদি। এছাড়াও কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমিশাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার শাকে প্রচুর আঁশ রয়েছে। একই সাথে ফলের মধ্যে বেল, পেয়ারা, কদবেল, আমড়া, আতা, নারকেল, জাম, গাব, কামরাঙ্গা, টমেটো,আম, কাঁঠাল, আপেল ও আমলকিতে অনেক আঁশ থাকে। এছাড়াও যব, ভুট্টা, আটা, তিল, কাঁচামরিচ ও সরিষাতে অনেক আঁশ আছে।