ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
ঢাকার ইতিহাস

ঢাকার মসজিদের ইতিহাসে নারীগন

| আপডেট : ৯ নভেম্বর, ২০১৭ ১২:৫৪
ঢাকার মসজিদের ইতিহাসে নারীগন

ঢাকার নাগরিক ইতিহাসে নারীদের অবদান কম নয়। যুগে যুগে বহু নারী তাদের বিবিধ অবদানের মাধ্যমে আমাদের ঢাকার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ এবং গৌরবময় করে গেছেন। ঢাকা "মসজিদের শহর" হিসেবে পরিচিত।

ঢাকার বহু মসজিদ তাদের নামেও পরিচিত। সুলতানি, মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলের সুবেদার বা আঞ্চলিক শাসকরা অনেক সময় তাদের মা, স্ত্রী ও কন্যাদের নামে মসজিদ নির্মাণ করেন। আবার বাংলাদেশের স্থানীয় জমিদার অথবা ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও মসজিদ নির্মাণ করেন মা, বোন ও স্ত্রীর নামে। সেইসাথে ঢাকার অনেক মসজিদ নারীদের অর্থেই নির্মিত হয়েছে।

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর ঢাকার ‘বিনত বিবি মসজিদ’ অন্যতম। নারিন্দায় এই মসজিদের অবস্থান। ১৪৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি দুই গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদের প্রবেশ দ্বারে খোদিত লিপি থেকে জানা যায়, ১৪৫৭ সালে মরহামত কন্যা বখত বিন বা বিনাত বিবি এ মসজিদ নির্মাণ করেন।

ঢাকার আরেকটি প্রাচীন মসজিদ হলো- সিংটোলার সিতারা বেগম মসজিদ। বাংলাবাজার প্যারিদাস রোডের পাশে অবস্থিত মসজিদটি। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে সিতারা বেগম নির্মাণ করেন।

ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় ১১১৮ হিজরি সালে মরিয়ম সালেহা মসজিদটি নির্মিত হয়। এটি বাবুপুরা শাহসাহেব বাড়িতে অবস্থিত।

অন্যদিকে ধানমন্ডির হাতীরপুল এলাকার বাইতুল মুবারক মসজিদটির নির্মাতা গোলেছা বিবি। ৩ হাজার বর্গফুটের এই মসজিদটি ১৯৬০ সালে নির্মিত।

বাহাদুর শাহ পার্ক মসজিদটি নির্মাণ করেন নান্নী বিবি। নির্মাণকাল ১২৩১ হিজরি। আয়তন ৩ হাজার বর্গফুট।

বেগমগঞ্জ আছিয়া মসজিদ ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন আছিয়া বেগম।

ভাটিখানা মসজিদ কাদের বিবি ১৭৫৭ সালে নির্মাণ করেন।

আরমানিটোলা বাঘের মসজিদটি ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে হিংগা বিবি নির্মাণ করেন। জিন্দাবাহার কামরাঙ্গা মসজিদ নির্মাণ করেন আকতারুন্নেছা।

এছাড়া ফখরুন নেছা ১৮৬০ সালে হাজারীবাগে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

লক্ষ্মীবাজার শাহ সাহেব বাড়ি মসজিদটির নির্মাণকাল ১৮৫০ সাল। এক গম্বুজ বিশিষ্ট দ্বিতল এ মসজিদের নির্মাতা লু‍ৎফুননেছা।

রঙ্গী বিবি ঢাকার ইবরাহীমপুর বাইতুস সালাম মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত।

জুরাইন বুড়ির মসজিদ ১৯৬৬ সালে স্থাপিত। নাম না জানা এক বিধবা মহিলা কর্তৃক এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

তেজকুনীপাড়ায় রয়েছে পীরমা কর্তৃক স্থাপিত পীরমা জামে মসজিদ। মসজিদটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত।

মিরপুর নবাবেরবাগ উত্তরপাড়া জামে মসজিদটি ১৯১০ সালে মালেকা খাতুন কর্তৃক নির্মাণ করা হয়।

আবার তেলীপাড়া মসজিদটির নির্মাতা মাকতি বিবি।

ইনতুন নেসা বিবি শ্যামপুর আলী বহর মসজিদটি ১৯১০ সালে নির্মাণ করেন।

একলাছ বিবি ও উলাছি বিবি ১৯২০ সালে খিলবাড়ী মসজিদটি নির্মাণ করেন।

 রাহেলা খাতুন বাংলা ১৩৪৪ সালে দক্ষিণ শাহজাহানপুরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

ফয়জুন বিবি ১৯৪০ সালে কাজলায় বায়তুল জান্নত মসজিদ নির্মাণ করেন।

গোলেছা বিবি ১৯৬০ সালে ধানমন্ডি বায়তুল মোবারক মসজিদ নির্মাণ করেন।

 সুফিয়া বেগম ১৯৬৫ সালে খিলক্ষেত নতুন বাজার মসজিদ নির্মাণ করেন।

 সমিরুন নেসা ও নুরজাহান খাতুন ১৯৬৪ সালে চিড়িয়াখানা মসজিদ নির্মাণ করেন।

কুলসুম বিবি ১৯৭৪ সালে শাহজাহানপুরে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

মাজেদা খাতুন ১৯৭৮ সালে কাজলারপাড় মসজিদ নির্মাণ করেন।

কুরশিয়া বেগম ১৯৮৪ সালে রামপুরা দারুস সালাম মসজিদ নির্মাণ করেন।

নুরবানু ১৯৩৮ সালে নিউ ইস্কাটন ছোট মসজিদ নির্মাণ করেন।

মজিরুন নেসা ১৯৮৩ সালে মিরপুর শাহমকসুদুল আওলিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন।

হাল সময়ে বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। এই নারী স্থপতি ২০১৬ সালে লাভ করেছেন আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার। স্থাপত্যের দুনিয়ায় অত্যন্ত সম্মানজনক এ পুরস্কার। রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ফায়দাবাদের বায়তুর রউফ মসজিদের নকশার জন্য তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৩ মার্চ ২০১৫ এবং বাংলানিউজ, ৮ মার্চ ২০১৭

উপরে