ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
বাংলা ভাষা

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন ইউরোপীয় পন্ডিতরা।

| আপডেট : ১ নভেম্বর, ২০১৭ ০৯:১০
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন ইউরোপীয় পন্ডিতরা।

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন ইউরোপীয় পন্ডিতরা। শুধু বাংলা ভাষার ব্যাকরণই নয়, নব্যভারতীয় প্রাদেশিক ভাষাগুলির অধিকাংশেরই ব্যাকরণ রচনার সূত্রপাত তাঁদের হাতে। বিদেশীরা নানা প্রয়োজনে ভারতবর্ষের আঞ্চলিক ভাষাসমূহ শিখতে ও সহগামীদের শেখাতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে তাঁদের প্রয়োজনই বাংলাসহ অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষার ব্যাকরণ রচনায় তাঁদেরকে উৎসাহিত করেছিল। আর এরকম প্রয়োজনের তাগিদেই পর্তুগিজ ধর্মযাজক পর্তুগালের এভোরাতে জন্মগ্রহনকারী মনোএল দ্য আসসুম্পসাঁউ (Manoel da Assumpcam) পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন।

পর্তুগীজ বণিকেরা বাংলাদেশে ব্যাবসা করার তাগিদে বাংলা শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। পর্তুগালের লিসবনে মুদ্রিত অভিধানটিতে বাংলা-পর্তুগীজ ও পর্তুগীজ-বাংলা দু'রকম শব্দ ভাণ্ডারই ছিল। পর্তুগীজরা এদেশের লোকের মুখে যে রকম ভাষা ও উচ্চারণ শুনতো, রোমান অক্ষরে সে রকমই ছাপা হয়েছিল বইটিতে। এর কিছু মনোগ্রাহী উদাহরণ দিযেছেন কেদারনাথ মজুমদার। যেমন, মুই যাইবাসছি (আমি যাইতেছি ) রোমান হরফে ছাপা হয়েছে 'Moui Zeibasschee' অথবা মুহর খোওয়া দওয়া (আমার খাওয়া দাওয়া ) রূপান্তরিত হয়ে হয়েছে 'Mouhore khoah dohah' ইত্যাদি। এদেশে তখনও বাংলা ছাপাখানা স্থাপিত হয় নি।

মনোএল ভাওয়ালের নাগরীতে একটি গির্জায় ধর্মযাজকের দায়িত্ব পালনকালে এটি লিখেন এবং ১৭৩৭ খ্রীস্টাব্দে এর পান্ডুলিপি নিয়ে লিসবনে যান। এরপর ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে ৫৯২ পৃস্টা সম্বলিত Vocabolario em idioma Bengalla, e Potuguez dividido em duas partes শীর্ষক গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটি দুটি অংশে বিভক্ত: প্রথম অংশ বাংলা ব্যাকরণের একটি সংক্ষিপ্তসার এবং দ্বিতীয় অংশ বাংলা-পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দাভিধান। গ্রন্থটি পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান হরফে মুদ্রিত হয়। এর কাঠামোগত আদর্শ গৃহীত হয়েছে লাতিন ব্যাকরণ থেকে, তাই এতে বর্ণিত হয়েছে লাতিন ভাষার ধাঁচে। আর এতে শুধু রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বই আলোচিত হয়েছে, ধ্বনিতত্ত্ব সম্পর্কে কোনো আলোচনা নেই।

তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া এবং Otto Zwartjes রচিত “Portuguese Missionary Grammars in Asia, Africa and Brazil, 1550-1800” গ্রন্থের (৫৮ – ৬০ পৃস্টা)।

উপরে