অপরিণত বয়সে শরীরে বলিরেখা পড়ার ৫ কারণ
বলিরেখা সম্পর্কে সাধারণত সবার একটি ধারণা যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি হবে এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কিন্তু আসলেই কি তাই? অল্প বয়সে মুখে বলিরেখা যে আপনাকে বৃদ্ধ করে তুলতে পারে এ নিয়ে আপনি জানেন? আজকাল অল্প বয়সে মুখে বলিরেখা দেখা দেয় নানা কারনে। যার ফলে কম বয়সেই দেখতে বয়স্ক লাগে। মুখের লাবন্য সহজেই হারিয়ে যায়।বলিরেখা দেখা দিলে বুঝবেন আপনার শরীরে কোন রকম ভাবে কোন কিছুর ঘাটতি হচ্ছে। সে ঘুম কম হতে পারে, পানি খাওয়া কম হতে পারে। অনিদ্রা, দুশ্চিন্তার ফলেও বলিরেখা দেখা দিতে পারে। আজকে তাই আমরা আপনাদের সুবিধার্থে জানাবো এমনি ৫ টি কারণের কথা যা আপনার অপরিণত বয়সে বলিরেখার কারণ।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অপরিণত বয়সে শরীরে বলিরেখা পড়ার ৫ কারণঃ
১। ত্বকের প্রধান শত্রু সূর্যের আলো। সানস্ক্রিন আপনার যতই তেলতেলে, চিটচিটে লাগুক না কেন, এই অজুহাত কিন্তু আপনার ত্বককে বোঝাতে পারবেন না। সূর্যের রশ্মি এবং চুলার আগুনের ফলে ত্বকের কোলাজেন ব্রেক করে। যে কারণে ত্বক পাতলা হতে থাকে এবং ঝুলে পড়ে। ধীরে ধীরে রিংকেল তৈরি হয়।
২। ধুমপানের ফলে মুখের চারপাশে ফাইন লাইন-তো দেখা যায়ই। সাথে সাথে এর কেমিক্যাল-গুলো দেহের ভিটামিন সি লেভেল কমিয়ে দেয়। যা সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার হার কমায়। এর ফলে ডাবল সান ড্যামেজ হয়। একজন সিগারেট প্রেমী এবং অধূমপায়ীর ত্বকের ভেতরে পার্থক্য দেখলে আপনি চমকাবেন কিন্তু! চেষ্টা করতে হবে প্যাসিভ স্মোকিং ও এড়িয়ে চলতে। এটা কিন্তু আরও বেশি ক্ষতিকর। আপনার আশে পাশে আমন কোনও কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাক্তি থাকলে তাকে আপনার আশেপাশে ধূমপান করতে অবশ্যই নিষেধ করবেন।
৩। আই মেকআপ করার সময় ঠিক কতক্ষণ ব্রাশ অথবা আঙ্গুল দিয়ে চোখের চারপাশে টানা হেঁচড়া করছেন খেয়াল করেছেন কখনও? ৩০ মিনিট প্রায়! একটা জটিল লুকের জন্য। আমাদের আই এড়িয়ার ত্বক একটা টিস্যু পেপার থেকেও বেশি পাতলা, জানেন এটা? একদিন আপনার নরম, কোমল, ব্রাশ-গুলো দিয়ে এক পিস টিস্যুর উপরে মেকআপ করার ট্রাই করে দেখবেন তো! ৫ মিনিটের আগেই ছিঁড়ে যাবে। তো তারও বেশি প্রেসার দিয়ে আপনি রোজ আই মেকআপ করছেন, ডাবল ট্রিপল প্রেসার দিয়ে আবার সেই মেকআপ ঘসে তলার চেষ্টা করছেন। ফাইন লাইন পড়বে না তো কী! মনে রাখবেন, মেকআপ ডেইলি না করলেও চলে। আর যদি করতেই হয় তবে রিমুভ করার জন্য অয়েল ক্লিঞ্জার ইউজ করবেন। তেল আর কাপড় দিয়ে ঘষাঘষি করবেন না। চোখের পাশে প্রতিটা টাচ আপনার ফাইন লাইন-এর চান্স বাড়াচ্ছে এটা মাথায় রেখে মেকআপ ব্রাশ-এর দিকে হাত দেবেন।
৪। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অতিরিক্ত হাসা, ভ্রু কোঁচকান এবং অন্যান্য ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন-এর ফলে ত্বকে অকালে বলিরেখা পড়ার হার অনেক অনেক বেড়ে যায়। স্পেশালি লাফ লাইন্স, চোখের পাশে ক্রোজ ফিট রিংকেল আর কপালের রিংকেল। কিন্তু, তাই বলে কি সারাদিন মুখ গোমড়া করে বসে থাকব? অবশ্যই না! কিন্তু অযথা চোখ কপালে তোলা, ভ্রু কুঁচকে তাকানো এসব কিন্তু কমানোই যায় তাই না? অনেকে থাকেন যাদের চোখের পাওয়ার দিন দিন কমছে। কিন্তু সঠিক চশমা ব্যবহার না করে তারা কষ্ট করে ভ্রু কুঁচকে সারাদিন দেখার চেষ্টা করে জান। এদের একই সাথে ডার্ক সার্কেল আর রিংকেল দুই সমস্যাই হয়। খেয়াল করুণ আপনি কোনও কারণ ছাড়া কপাল কুচকাচ্ছেন কিনা বা অযথা মুখভঙ্গি করছেন কিনা। একটু সাবধানতাই অকালে রিংকেল প্রতিরোধে কাজে আসে। কে জানে হয়ত এই ভালো অভ্যাসগুলোই অযথা আপনার ভ্রুর মাঝের রিংকেল, কপালের বলিরেখা আর চোখের পাশের ক্রোজ ফিট থেকে আপনাকে ১০ বছর দূরে রাখবে!
৫। আজকাল সবাইতো সবসময় ডায়েট-এর উপরেই থাকছে। বছরের পর বছর দেহের দরকারি ফ্যাট-টুকুও খাচ্ছেন না এমন মানুষ অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু কি জানেন, স্নেহ বা ফ্যাট-এর একটা প্রধান কাজ হলো দেহের ত্বককে আদ্র বা ময়েশ্চারাইজড রাখা। বাইরে থেকে এই লোশন ঐ তেল মেখে এটা করা যায় না। শুষ্ক ত্বক খুব দ্রুত ফাইন লাইন বা রিংকেল-এর শিকার হয়। আর এইজন্য আজকাল খুব কম বয়সি কিশোরী বা তরুণী যারা কোনও সঠিক জ্ঞান অর্জন না করে নিজে নিজে সারাদিন ‘ডায়েট’ করে তাদের ত্বকের লাবণ্য কমছে, ফাইনলাইন বাড়ছে। একদিনে ১ বাটি রেড মিট বা মিষ্টি খেয়ে ১০ দিন গাজরের টুকরো খেয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে আপনি নিজের ক্ষতিই করছেন শুধু। এর চেয়ে ডেইলি কনট্রোলড ডায়েট প্র্যাকটিস করুন। প্রয়োজনীয় ফ্যাট অবশ্যই খাবেন। মনে রাখবেন সামান্য জ্ঞানটুকুও যাদের নেই একমাত্র তারাই ‘ফ্যাট ফ্রি ডায়েট’ নামক জিনিসে বিশ্বাস করে।
এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের কারণে অল্প বয়সে বলিরেখা দেখা দেয় তাই শরীরকে ঘুমের জন্য তৈরি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রোজ ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে।চাইলে হাতের কাছে ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েল রাখতে পারেন। ১ ফোঁটা বালিশে দিয়ে রাখবেন। ল্যাভেন্ডার-এর ঘ্রান স্ট্রেস কমায়, ঘুমাতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, এক রাতের ঘুম ১০০০০ টাকার কসমেটিক থেকেও ভালো কাজ করে।