মধুর অনন্য একটি গুণ- ওজন বৃদ্ধি
মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল ; এটি সুপেয়। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে এর ব্যবহারে চিনির চেয়ে এর অনেক সুবিধা রয়েছে। এর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকে চিনির চাইতে মধুকেই পছন্দ করে থাকেন। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ। সুন্দরবনেরবেশীরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন। সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করে। মধুর অন্য একটি গুণ হল এটি কখন নষ্ট হয় না৷
কি কারনে মধু ওজন বৃদ্ধি করে
যারা ওজন বাড়ানোর জন্য রাত-দিন শুধু চেষ্টা করে যাচ্ছেন, মধু তাদের জন্য অনেক কার্যকরী হতে পারে। কিন্তু তার আগে বুঝতে শরীরের মক্তি সঞ্চারের ধরন।
মানবদেহে দুইভাবে শক্তি সঞ্চিত থাকে, চর্বি এবং সুগার রূপে। ওজন বাড়ানোর জন্য সাধারণত আমরা মনে করি বেশি করে চর্বি জাতীয় খাবার খেলেই যথেষ্ট। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম তারা দিনভর চর্বি জাতীয় খাবার খেলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ, অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের ফলে চর্বি দ্রুত ঝড়ে যায়। তাই তাদের জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি সুগার। যা দেহের কোষে কোষে জমে থাকে এবং খুব সহজে নিঃসৃত হয় না। তখন বেশি এক্সারসাইজ করলেও ঝড়ে যায় না দেহের শক্তি।
তখন চর্বিরূপে ঝরে যাওয়া এনার্জি মধু গ্রহণের ফলে তা আবার মাংসপেশীতে পুঞ্জীভূত হয় সুগার রূপে। আর তখনই দেহগড়নে আসে এক ধরনের পরিবর্তন। মূলত এভাবেই অ্যাথলেট এবং ভারোত্তলনকারীরা তাদের ফিটনেসকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ওজন বাড়ানোর জন্য মধুর গুনাগুণ সম্বন্ধে আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন একটি প্রতিবেদনে জানায়, এক টেবিল চামচ মধুতে আছে ১৭.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। যা অ্যাথলেট বা শরীরচর্চাবিদদের এক টেবিল চামচ পরিমাণ এনার্জি এনহ্যান্সমেন্ট (শক্তিবর্ধক) জেলের মধ্যে থাকে। কিন্তু এক টেবিল চামচ মধুতে সেই কৃত্রিম শক্তিবর্ধক সমপরিমাণ উপাদনই থাকে। তাই আমেরিকান ক্লিনিকাল নিউট্রিশন বিভাগের গবেষকরা কৃত্রিম শক্তিবর্ধকের পরিবর্তে মধুকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
গবেষকরা আরো জানান, নিয়মিত ব্যায়ামের পর শরীরের কার্বোহাইড্রেট লেভেল নিচে নেমে যায়, যার ফলে ক্লান্তি এসে শরীরে ভর করতে পারে। কিন্তু নিয়মিত মধু গ্রহণ করলে দেহের কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কখনোই নিচে নামে না। কারণ মধুতে থাকা কার্বোহাইড্রেটগুলো দেহের বিভিন্ন অংশ সমানভাবে বিভক্ত হয়ে যায় এবং তা প্রতিটি দেহ কোষ ও মাংসপেশীতে গিয়ে জমে থাকে বলে তা সহজে ঝরে যায় না। আর কার্বোহাইড্রেট লেভেল অপরিবর্তিত থাকে বলে, ক্লান্তিও শরীরে ভর করে না। শক্তি পুঞ্জিভূত থাকে দেহে, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।