গোসলের উপকারিতা
সেই ছোট থেকে রোবটের মত নিয়ম মেনে আসছি। কিন্তু সেই নিয়মের পিছনে কি আসলেও কোন যুক্তি রয়েছে, নাকি পুরোটাই ভুল ধারণা? জন্মানোর কিছু সময় পর থেকেই নবজাতককে গোসল করানো শুরু হয়ে যায়। কখনও দিনে একবার, কখনও-কখনও তো ২-৩ বার।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন শরীরকে রোগমুক্ত এবং চাঙ্গা রাখতে গোসলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই এটি শুধু অভ্যাস বা দৈনিক রুটিনের একটা অংশ নয়, আরও বেশি কিছু!
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্লান্তি এবং গায়ের গন্ধ দূর করার পাশাপাশি গোসল করার অভ্যাস আরও অনেক উপকারে লাগে। যেমন…
১. পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ায়
সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে আমাদের সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পেশিরা যেমন ক্লান্ত হয়ে পরে, তেমনি তাদের গায়ে বেজায় চোট-আঘাতও লাগে। এমন অবস্থায় দিনের শেষে হালকা গরম পানি অথবা ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে পেশির চোট সারতে শুরু করে। সেই সঙ্গে তারা পুনরায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, পেশির সচলতা বৃদ্ধির পিছনে গোসলের যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন গবেষকরাও।
২. রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটে
গবেষণায় দেখা গেছে গোসল করার সময় ঠাণ্ডা পানির স্পর্শ লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন হার্টের পাশাপাশি দেহের ভাইটাল অর্গানদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি অন্যদিকে রক্তচাপও কমতে থাকে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর একেবারে তরতাজা হয়ে ওঠে।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
গবেষণা বলছে ডায়াবেটিস রোগীরা যদি টানা ৩ সপ্তাহ, দৈনিক ২০-৩০ মিনিট গরম পানিতে গোসল করেন, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ১৩ শতাংশ কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
শুধু ঠাণ্ডা নয়, গরম পানি গোসল করার সময়ও ভাসকুলার এবং লিম্ফ সিস্টেম থেকে প্রচুর মাত্রায় ইমিউন সেলের জন্ম হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তত রোগভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়।
৫. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমায়
দিন শেষে ক্লান্তি এবং স্টেস যখন ঘারে চেপে বসে, তখন যেন পা এগুতে চায় না। মনে হয় জীবনটা যেন থেমে গেছে । এমন অবস্থায় মহৌষধির কাজ করে এক বালতি ঠাণ্ডা পানি। সেটা যখন মাথা হয়ে সারা শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে বিটা-এন্ডোরফিন এবং নোরা এড্রেনালিনের মতো হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে নিমেষে স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশন কমে গিয়ে মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে ক্লান্ত জীবন ফিরে পায় তার হারিয়ে যাওয়া মরুদ্যান!
৬. ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ে
বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে প্রতিবার ঠাণ্ডা পানি মাথায় ঢালার সময় কোনও এক অজানা কারণে আমাদের ফুসফুস সংকুচিত হয়ে যায়। এমনটা বারে বারে হওয়ার কারণে ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রসঙ্গত, যে হারে আজকাল বায়ুদূষণের প্রকোপ বাড়ছে তাতে ফুসফুসকে অতিরিক্ত চাঙ্গা না রাখলে কিন্তু বিপদ! তাই যতই ল্যাথারজিক লাগুক না কেন, প্রতিদিন সকাল-বিকাল গোসল করা উপকারীই বটে!
সূত্রঃ ইন্টারনেট