ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪
আঁচিল

গায়ে আঁচিল? এ সম্পর্কে জেনে নিন

| আপডেট : ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ১০:৩০
গায়ে আঁচিল? এ সম্পর্কে জেনে নিন

ত্বকের সৌন্দর্যের একটি পরিচিত সমস্যা হচ্ছে আঁচিল বা মোল।সাধারণত এতে ব্যাথা বা জালাপোড়া না থাকলেও এটি মনের ভেতর বেশ অস্বস্তির জন্ম দেয়। সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি লাগে তখনই যখন এটি ত্বকের দৃশ্যমান অংশে জন্মায়। তবে কখনো কখনো আঁচিল থেকে ক্যান্সার হতে পারে। এসব কারণেই আঁচিল দূর করার জন্য চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে অনেকে এটিকে অবহেলা করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণ করেন। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের রয়েছে আঁচিল অপসারণ অত্যান্ত সহজ, নিরাপদ ও ঝঁকিহীন চিকিৎসা ব্যবস্থা।

আঁচিল কি

আঁচিল মূলত এক ধরণের স্কিন গ্রোথ। এটিকে মোল বা ওয়ার্ট বলা হয়। এটি যেকোন বয়সের মানুষের ত্বকের যেকোন অংশেই হতে পারে। আঁচিলের রং সাধারণত বাদামি বা কালো হয়ে থাকে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে আঁচিল ত্বকের উপরে একটি গোটার মতো দেখায়। তবে কখনো কখনো এটি গুচ্ছ আকারেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি আচিল একসাথে দেখাদেয়। শিশু বয়সেই আচিলের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আচিলের আকার, আকৃতি ও রংয়ের পরিবর্তন হতে পারে।

আঁচিল কেন হয়

আঁচিল হওয়ার পেছনের কারণগুলো আমাদের জনা উচিত। কারণ আমাদের দেশে আঁচিল নিয়েও অনেক কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। আঁচিল হওয়ার পেছনে মূল করণ হচ্ছে মেলানোসাইট কোষের ভারসাম্যহীনতা। আমাদের ত্বকের পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থের জন্য দায়ী এই মেলানোসাইট। এ কারণেই আমাদের একেক জনের ত্বকের রং একেক রকম। মানুষের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে এই কোষগুলো ত্বকের সব জায়গায় সমানভাবেই বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যখন সমানভাবে না হয়ে কোন একটি নির্দিষ্ট জায়াগায় গুচ্ছাকারে বৃদ্ধি পায়, তখনই সেখানে জন্ম হয় আঁচিল বা মোল।এছাড়া ভাইরাল ইনফেকশন, বিশেষ করে, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (human papillomavirus) বা সংক্ষেপে এইচ-পি-ভি (HPV) দ্বারা সংক্রমিত হলে ত্বকে আঁচিল হতে পারে।

বিভিন্ন প্রকারের আঁচিল

আচিলের গঠন ও আকৃতি অনুযায়ি কয়েকটি ভাগে একে ভাগ করা যায়।যথা:

১। প্লান্টার ওয়ার্ট বা প্লান্টার আঁচিল: এধরণের আঁচিল পায়ের পতায় হয়। সাধারণ আঁচিলের মতোই শক্ত ধরনের গোটা আকৃতির হয়ে থাকে এটি।

২।  স্পর্শকাতর স্থানে আঁচিল: স্পর্শকাতর স্থানে কিংবা আশে পাশে পাতলা, ছোট গোটা, গোলাকৃতি কিংবা চেপ্টাকৃতি, কখনও কখনও একসাথে অনেকগুলো দেখা যায়।

৩। ফিলিফর্ম আঁচিল: কারো কারো মুখে বা গলায় এধরণে আঁচিল দেখা যায়। এর গঠন পাতলা সূতোর মতো।
৪। চেপ্টাকৃতি আঁচিল: বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকৃতি চেপ্টা গোটা একসাথে দেখা যায়। এধরণের গোটা শরীরের ভিবিণ্ন জায়গা তথা: মুখে, গলায়, বুকে, হাটুতে, হাতে, কোমরে কিংবা বাহুতে জন্মে।

আঁচিল কাদের হয় এবং এটি হলে কি করা উচিত

যেকোনো বয়সে আমাদের শরীরে আঁচিল হতে পারে। তবে শিশু ও তরুণদের ক্ষেত্রে আঁচিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যাক লোক সারা জীবন আচিল বয়ে বেড়ান। তবে এটি মোটেও ঠিক নয়। আঁচিল হওয়ার ২/১ মাসের মধ্যে ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় একটি আঁচিল থেকে আরেকটি আঁচিল জন্মাতে পারে। এছাড়া আঁচিল ছোয়াচেও হতে পারে। তাই শরীরে এটি নিয়ে ঘুরে বেড়ালে আপনার আপন জনের শরীরেও দেখা দিতে পারে এটি। কারণ আঁচিল আক্রান্ত ব্যাক্তির ত্বকের সংস্পর্শে, এমনকি একই তোয়ালে বা তৈজসপত্র ব্যবহারে আঁচিল হতে পারে। এছাড়া যদি আপনার বয়স ৪০-এর বেশি হয় এবং আপনার দেহে নতুন আঁচিল জন্ম নেয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত। কেনোনা এধরণে গ্রোথ গ্রোয়িং এজে বা বাড়ন্ত বয়সে হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ৪০ বছরের পরে হওয়াটা হতে পারে অন্যকোনো স্কিন সমস্যার লক্ষণ।

আঁচিল কি ক্যান্সার

আঁচিল সাধারণভাবে ক্যান্সার নয়। সৌন্দর্যেহানী ছাড়া এটি তেমন কোন ক্ষতি-ও করে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার হতে পারে। যদি দেখেন আপনার আঁচিলটি ৪০ বছরের পর আবির্ভূত হয়েছে। অথবা এর রং, আকার-আকৃতি, উচ্চতায় পরিবর্তন হয়েছে, আঁচিল থেকে রক্তপাত হচ্ছে, ব্যথা বা চুলকানি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে আপনাকে।

আঁচিল প্রতিরোধে কতগুলো বিষয় মনে রাখতে হবে। যথা:

১। ত্বকে আঁচিল দেখা দিলে তা স্পর্শ করা যাবে না।

২। নখ দিয়ে আঁচিল খোঁচানো যাবে না। এতে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

৩। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্যদের ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪। নিজে নিজে চিকিৎসা অর্থা কাঁচি, ব্লেড বা রেজার দিয়ে আঁচিল কাঁটা যাবে না।

৫। ব্লেড বা রেজার দিয়ে অবাঞ্চিত লোম দূর করার ক্ষেত্রে ঐসব জায়গায় আঁচিল থাকলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় আঁচিল কেঁটে গেলে ভাইরাস সংক্রামণের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৬। আক্রান্ত ব্যাক্তির নখের আচড়ে অন্যদেরও আঁচিল হতে পারে। তাই নিয়মিত হাতের নখ পরিস্কার করতে হবে।

৭। আক্রান্ত ব্যাক্তির হাত সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৮। অন্য মানুষের আঁচিল স্পর্শ করবেন না।

আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানে বেশ উন্নত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এদেশের বিপুল সংখ্যাক লোক আঁচিলকে অবহেলা করে সারাজীবন বয়ে বেড়ান। দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল, ক্লিনিকের চর্মরোগ বিভাগে এর সফল চিকিৎসা সম্ভব। তবে হ্যাঁ আঁচিলের চিকিৎসা একটু সময় সাপেক্ষ। ঔষধের মাধ্যমে আঁচিল দূর হতে একটু ধৈর্য ধরতে হবে আপনাকে। তবে যারা খুব অল্প সময়ে আঁচিল দূর করতে চান তাদের জন্য রয়েছে লেজার চিকিৎসা।

সূত্রঃ ইন্টারনেট

উপরে